বিদেশী ড্রাগন ফলের চাষ বাউফলের ছাঁদ বাগানে

বিদেশী ড্রাগন ফলের চাষ বাউফলের ছাঁদ বাগানে

সাইফুল ইসলাম, বাউফল  :   বিদেশী ডাগন ফলের চাষ বাউফলের ছাদে স্থান নিয়েছে। দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে ড্রাগন ফলের চাষ। বিদেশী ফল হওয়ায় প্রথম দিকে এটা সকলের কাছে অপরিচিত ছিল। কিন্তু এখন বেশ পরিচিত ও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। কোভিড-১৯ ছুটিকালীন সময়ে ব্যস্ত থাকার লক্ষ্যে শখের বশবর্তী হয়ে কিংবা অবসর সময় কাটাতে ছাদ বাগানে অনেকেই এখন ড্রাগন চাষ করেছেন। সাফল্যেও পেয়েছেন অনেকেই। আবার বাড়ীর পাশে পতিত জমি না থাকায় মাটি সংগ্রহ করে বাসার ছাদে বাগান তৈরী করে সেখানেই চাষ করেছেন এই জনপ্রিয় ফলের।
বাউফল পৌর শহরে প্রাথমিক স্কুল শিক্ষকা নাজমা আক্তার, জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত সাংবাদিক, এমরান হাসান সোহেল. মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মামুন হোসেন, শফিকুল ইসলাম ও রুমানা আক্তার একজন গৃহিনী ছাদ বাগানে ড্রাগন চাষ করেছেন। এছাড়াও পৌরসভার  ৯ নং ওয়ার্ডের মোঃ সোহরাব হোসেন এক কলেজ শিক্ষক, ৮ নং ওয়ার্ডের অহিদুজ্জামান সুপান ও মঞ্জুর মোর্শেদ দুইজন কলেজ শিক্ষক ও  ৩ নং ওয়ার্ডে মশিউর রহমান, কহিনুর বেগম দুই  কলেজ শিক্ষকও  ছাদ বাগানে ড্রাগনের চাষ করেছেন। এদের কাছ থেকে অনুপ্রনিত হয়ে এলাকায় অনেকেই ছাদে বাগানে ড্রাগন চাষ শুরু করেছেন।
বাউফল ফারুক তালুকদার মহিলা ডিগ্রী কলেজের রসায়ন বিষয়ের প্রভাষক অহিদুজ্জামান সুপান বলেন, তাঁদের কলেজের শিক্ষক মশিউর রহমানের বড় ভাই তৎকালীন পটুয়াখালীর উদ্দ্যান গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডঃ মোস্তাফিজুর রহমান আমাদেরকে ড্রাগন চাষে অনুপ্রণিত করেন। এরপর তাঁর কাছ থেকে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০/১২ জন শিক্ষক প্রথম ড্রাগন গাছের চারা সংগ্রহ ছাদ বাগানে  চাষ শুরু করেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী সফলতা পেয়েছেন সহকারি অধ্যাপক মোঃ সোহরাব হোসেন।
ড্রাগন ফলের চাষ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ২০০৭ সালে থাইল্যান্ড থেকে এই ফলের বিভিন্ন জাত আনা হয়। এটি মুলত আমেরিকার প্রসিদ্ধ একটি ফল। বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সিটিউট (বারি) কর্তৃক উদ্ভাবিত ড্রাগন ফলের নতুন জাতটি হলো বারি ড্রাগন ফল-১ যা দক্ষিণ -পূর্ব এশিয়া বাংলাদেশের জনপ্রিয় ফল। কালিশুরী ডিগ্রী কলেজের উদ্ভিদ ও পুষ্টি বিষয়ক প্রভাষক তাছলিমা আক্তার বলেন, ড্রাগন গাছের কোন পাতা নেই। এটা এক ধরনের ক্যকটাস জাতীয় গাছ। এ ফলের আকার বড়, পাকলে খোসার রং লাল হয়ে যায় ,শাঁস গাঢ় গোলাপী রঙের, লাল ও সাদা এবং রসালো প্রকৃতির। ফলের বীজগুলো ছোট ছোট কালো ও নরম। একটি ফলের ওজন ১৫০ গ্রাম থেকে ৬০০ গ্রাম  পর্যন্ত হয়ে থাকে।
বরিশাল রহমতপুরের কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ডঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ড্রাগন ফল রোপণের জন্য উপযোগী সময় হলো মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য ওক্টোবর পর্যন্ত। ড্রাগন ফল খুব দ্রæত বাড়ে এবং মোটা শাখা তৈরি করে। একটি ১ বছরের গাছ ৩০টি পর্যন্ত শাখা তৈরি করতে পারে। কাটিং পদ্ধতিতে এর বংশ বৃদ্ধি করা সহজ। আমাদের দেশে জুলাই থেকে এ ফল পাকা শুরু করে। এর ফুল সাধারনত রাতে ফোটে। ফুল ফোটার পর হাত দিয়ে নাড়িয়ে দিলে পরাগায়ন ভালভাবে ঘটে। ফলে ফলন বেশি পাওয়া যায়। রোদ বেশী পাওয়া যায় এবং যে স্থানে পানি জমে থাকে না এমন স্থানে লাগাতে হবে। গাছ লতানো এবং ১.৫ থেকে ২.৫ মিটার লম্বা হওয়ায় সাপোটের জন্য ৪ টি চারার মাঝে ১টি সিমেন্টের ৪ মিটার লম্বা খুঁটি অথবা বাশ পুততে হবে। চারা বড় হলে রশি দিয়ে বেধে দিতে হবে যাতে করে আঁকড়ে ধরে গাছ সহজেই বাড়তে পারে। প্রতিটি খুঁটির মাথাই একটি করে মটর সাইকেলের পুরাতন টায়ার মোটা তারের সাহায্যে আটকিয়ে দিতে হবে। তারপর গাছের মাথা ও অন্যন্য ডগা টায়ারের ভিতর দিতে বাইরের দিকে ঝুলিয়ে দিতে হবে। কেননা এভাবে ঝুলন্ত ডগাই ফল বেশি ধরে ।
তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে সাধারণত দুই প্রজাতির ড্রাগন হয়ে থাকে। লাল ও সাদা। পুষ্টিগুনও রয়েছে অনেক। ভিটামিন সি, মিনারেল এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত। ফলে ফিবার, ফ্যাট, ক্যারোটিণ, প্রচুর ফসফরাস, এসকরবিক এসিড, প্রোটিন ,ক্যালসিয়াম, আয়রন রয়েছে।. ক্যারোটিন সমৃদ্ধ থাকায় চোখ ভালো রাখে।.আঁশের পরিমাণ বেশি থাকায় হজমে সহায়তা করে। এছাড়া আঁশ শরীরের চর্বি কমায়। এই ফলে বিদ্যমান প্রোটিন শরীরের যাবতীয় বিপাকীয় কাজে সহায়তা করে।  এর ক্যালসিয়াম হাড় শক্ত ও দাঁত মজবুত রাখে। ভিটামিন বি রক্তের কোলেস্টেরল কমায় এবং ত্বক মসৃণ রাখে। ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বক , দাঁত ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে।  ড্রাগন ফলের জন্য ক্ষতিকর পোকা মাকড় খুব একটা চোখে পড়ে না, তবে মাঝে মাঝে এফিড ও মিলি বাগের আক্রমণ দেখা যায়। এফিডের বাচ্চা ও পূর্ণ বয়স্ক পোকা গাছের কচি শাখা ও পাতার রস চুষে খায়। এ পোকা দমনে সুমিথিয়ন/ডেসিস/ম্যালাথিয়ন এসব কীটনাশক প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২৫ মিলিলিটার বা ৫ কাপ ভালো ভাবে মিশিয়ে স্প্রে করে সহজেই এ রোগ দমন করা যায়।
বাউফল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, এ অঞ্চল ড্রাগন চাষের উপযোগী হওয়ায়র উজ্জল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে এর চাহিদা থাকায় বাজার ভাল পাওয়া যাচ্ছে। ড্রাগন চাষ করার আগ্রহ আছে  অনেকের। আগহীদের  তালিকা সংগ্রহ করছি। তাঁদেরকে কৃষি বিভাগ থেকে চারা বিতরন করা হবে। এ ছাড়া কেউ ড্রাগন ফল  চাষ করলে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাঁদেরকে পরামর্শসহ সব ধরনের সহযোগিতা চলমান থাকবে।